Poetry and Film: The relationship between cinema is very deepকবিতা ও চলচ্চিত্র: সিনেমার সম্পর্ক অনেক গভীর

imhrauntor
6 Min Read

Poetry and Film: The relationship between cinema is very deep

কবিতা ও চলচ্চিত্র: সিনেমার সম্পর্ক অনেক গভীরভাষাশ্রয়ী ওতপ্রোত প্লট, গতি, সংলাপ, ইমেজ প্রভৃতির ইঙ্গিতময় সম্ভাবনা যুক্ত অনুভূতি ও মননের প্রত্যক্ষ প্রকাশকে — যেখানে উপাদানগুলি অভিব্যক্তিকে সাহায্য করে—লিরিক কাব্য বলা যায়। ঠিক এটাই হচ্ছে ফিল্মকাব্যেরও লক্ষ্য, অবশ্যই নিজস্ব মাধ্যমে। ফিল্মকাব্যে কাহিনি থাকতে পারে কিংবা তা একেবারে কাহিনি শূন্যও হতে পারে। এ জাতীয় ছবি কখনো সচিত্র ইমেজ নির্ভর, কখনো সংগীত কেন্দ্রিক শুধু — কোনো ক্ষেত্রে ধার করা, অন্যত্র বিশেষভাবে রচিত, ছবিতে সংলাপের উপস্থিতিও আশ্চর্য নয় অথবা বর্ণনার, অবশ্য উপকরণগুলির অস্তিত্বই যে ফিল্মকে কবিতা করে তোলে তা নয়। এদের এফেক্টেই কবিতা তৈরি হয়। সদৃশ অভিব্যক্তি থাকলেও অনেক ছবিকে কাব্য বলা যায় না। এবম্বিধ ক্ষেত্রে, ফলাফল বা যোগাযোগের মধ্যে অভাব রয়েছে তীব্রতা, মগ্নতা ও ব্যক্তিগত মানসের যা লিরিকের বৈশিষ্ট্য। এটা আরেকটা শক্তিশালী ফর্মাল উপাদানের ফল, তার মধ্য দিয়েই কাব্যরস নিঃসৃত হয়। ড্রেয়ারের ‘প্যাশন অব জোয়ান অব আর্ক’ ছবিতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য জোয়ানের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে।

Poetry and Film: The relationship between cinema is very deepকবিতা ও চলচ্চিত্র: সিনেমার সম্পর্ক অনেক গভীর

এ দৃশ্যে তার যন্ত্রণা এবং কারাগারের পরিবেশের যে পরিচয় আছে ঘটনা তথা বর্ণনার পরিপূরকরূপেই তাদের স্থান, নিজস্ব প্রয়োজনে তারা আসেনি। তা ছাড়া আরো বড়ো কথা হলো এই যে আমাদের মনে হয় অনুভূতিগুলি জোয়ানের নিজস্ব, নির্মাতা বা আমাদের নয়। এ সীমাবদ্ধতা খাঁটি ফিল্মকাব্যে—যেখানে অভিব্যক্তি চরম ও সার্বিক, আমরা তা গ্রহণ করি বা না করি—পাওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত ‘ফোর হানড্রেড রোজ’ ছবির অংশ বিশেষ, বিশেষত কিশোর নায়কের ভ্যানে

Poetry and Film: The relationship between cinema is very deep

করে থানায় যাওয়ার দৃশ্যটি এসে পড়ে। বালকটির দৃষ্টিতে অপস্রিয়মাণ রাত্রির পথ, ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে যে জীবন তার কয়েকটি টুকরো উদ্ভাসিত। কিন্তু এই মর্মভেদী ব্যঞ্জনাটুকুও বিশেষ পরিস্থিতিনির্ভর বলেই আমাদের আক্রান্ত করে, এবং কাব্যময় বর্ণনা হলেও এ দৃশ্য ফিল্মকাব্য নয়। ফিল্মকাব্যকে, প্রথমত ব্যক্তিগত ও বিমূর্ত অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। তার সঙ্গে বর্ণনাত্মক কিংবা অন্য কোনো প্রথাসিদ্ধ এফেক্ট যোগ করাটা নিতান্ত গৌণ। ফর্মাল প্রসঙ্গেও, এমনকী বাস্তব চরিত্রকে কেন্দ্র করেই, যে ফিল্মকাব্য সৃষ্টি করা যায় তার এক চমৎকার দৃষ্টান্ত পাই বার্গম্যানের দি নেকেড নাইট’ ছবির ফ্ল্যাশব্যাক অংশে। দর্শকের সামনে সৃষ্ট হয় এক মুখর জগৎ যেখানে এক ক্লাউন ও তার স্ত্রী কবিতার প্রতীকী মানুষ হয়ে উঠেছে।

নির্বাক ও সবাক যুগে রবীন্দ্রনাথের চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তার আলোচনা

কয়েকজন সৈনিক মহড়া দিচ্ছে সমুদ্রের ধারে। স্ট্রাইপদেয়া জাঁকালো পোশাকে আলমা তাদের সামনে ঘোরাঘুরি করছে, লোকগুলো তাকে আপাদমস্তক গিলছে যেন। তারা আলমার বাড়িয়ে ধরা টুপিতে কিছু পয়সা ফেলল। আলমা কাপড় ছাড়তে আরম্ভ করেছে। এর মধ্যে খবর পেয়ে সমুদ্রতীরে পৌঁছে ক্লাউন ফ্রস্ট নগ্ন আলমাকে এককোমর জলে দাঁড়িয়ে কতকগুলো সৈনিকের সঙ্গে মস্করা করতে দেখে। বাকি সবাই মজা দেখছে। ফ্রস্ট আলমাকে ডাকল। ফ্রস্টের ডাক শুনে লজ্জিত আলমা উঠে আসতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না, ফ্রস্ট জামা ছেড়ে জলে নামে, আলমাকে সে তুলে ধরে, আলমা তার কাঁধ ধরে ঝোলে, ফ্রস্ট তার পিছনে হাত রাখে। এইভাবে স্ত্রীর নগ্নতা কিছুটা আড়াল করে ফ্রস্ট নিজের শরীর দিয়ে। সমুদ্রতীর ছাড়িয়ে আলমাকে নিয়ে টলতে টলতে ফ্রস্ট একটা চড়াইয়ে ওঠে। সেপাইগুলো বুনো আনন্দে পিছু নেয়, অন্য লোকও জড়ো হতে থাকে। আমরা দেখি আলমার মুখ, যন্ত্রণার, লজ্জার।

Poetry and Film: The relationship between cinema is very deepকবিতা ও চলচ্চিত্র: সিনেমার সম্পর্ক অনেক গভীর

আমরা দেখি ফ্রস্টের মুখ—নিজের ও স্ত্রীর অপমানে, অবসাদে ও ক্ষতের জ্বালায় কাতর ক্লাউনের মেকআপকেও মুখের ক্ষত বলে মনে হয়। ফ্রস্ট পড়ে গেলে আলমা তাকে টেনে তোলে, শুরু হয় আবার পথ চলা। অবশেষে কোনোরকমে সার্কাসের তাঁবুতে পৌঁছিয়েই সে জ্ঞান হারায়, সঙ্গীরা তাকে ও আলমাকে ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে যায়। একজন আকাশের দিকে তাকিয়ে ভুরু মোছে, বড়ো নিষ্করুণ আকাশ। এইভাবে বর্ণনাত্মক সিচুয়েশনে বাস্তব চরিত্র মিথের তাৎপর্য পায়।
নির্মাতার দৃষ্টিতে আগাগোড়া সম্পৃক্ত চরিত্র আর ঘটনাটি আপাত অর্থ হারিয়ে মানবিক প্রেমের যন্ত্রণার এক ধর্মীয় গাথায় রূপান্তরিত হয়েছে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ই, উল্লসিত ভিড়ের মধ্যে, খ্রিস্টের মতোই অপমানিত, মানুষটির কাঁধে রক্তমাংসের মানবীটি মহিমা পেয়েছে। ওপরের আলোচনা থেকে আমরা করতে পারি যে ফিল্মকাব্য সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন বাস্তব চরিত্র ও ঘটনাগুলিকে স্রষ্টার মনন ও অনুভূতির প্রতীকে রূপান্তরীকরণ। তাদের সত্তার আভাসটুকু থাকবে কেবল, বেশি স্বরূপে থাকলেই কিংবা অত্যধিক বর্ণনাত্মক বা বাস্তব-নির্ভর হলেই লিরিকের শুদ্ধ নির্যাসটুকু হারিয়ে ফিল্মকাব্যের মূল শর্ত হচ্ছে আঙ্গিক ও বিষয়কে সামগ্রিকভাবে শিল্পীর কল্পনায় রূপান্তরিত করা। নিছক শারীরিক অস্তিত্বের আবেদনকে কবিতার মতো রূপায়িত করা হয়েছে রেনোয়ার ‘এ ডে ইন দ কানট্রি’ ও ‘পিকনিক ইন দ গ্রাস’ ছবিতে। উভয় ছবিতেই গ্রামীণ প্রেম প্রকৃতির স্তব হয়ে উঠেছে, মুখর হয়েছে পর্ণকম্পন, দুরস্ত ঝিকিমিকি জলধারা, বাতাসতাড়িত তৃণদল, পাতার ওপর জলবিন্দু আর পুষ্পাশ্লিষ্ট পতঙ্গ।

সিনেমা দারুন সব রিভিউ পড়তে ভিজিট করুন

মানস লোকের মালমশলা নিয়ে সাহিত্যগুণবর্জিত ফিল্মকাব্য সুন্দরভাবে, এমনকী ধ্রুপদী পর্যায়ে সৃষ্ট হয়েছে মগ্নচৈতন্যকেন্দ্রিক Un Chien Andalou ছবিতে। যেহেতু মগ্নচৈতন্যনির্ভর কিংবা মুক্তানুষঙ্গজাত ছবি কখনোই সম্পূর্ণ ‘আর্ট’ হিশেবে সফল হয় না, সুতরাং ইম্প্রেশনিজম ছাড়া অন্য কোনো ভাবে অ-সাহিত্যমূলক বিশুদ্ধ ফিল্মকাব্যের সাফল্যটাই আসল প্রশ্ন হয়ে ওঠে। [ কবিতার সঙ্গে চলচ্চিত্রের যোগাযোগ পরিচালক থেকে পরিচালকে আলাদা। যেমন ককতো নিয়েছেন মূলত কবিতার কাব্যময়তা থেকে। কিন্তু ইয়াঞ্চো নিয়েছেন মূলত কবিতার সংগীতময়তা থেকে। আবার পাসোলিনি গেছেন বস্তুসত্য থেকে কাব্য সত্যের দিকে। আর বার্গম্যান ও তারকোস্কির ছিল কাব্যিক অন্তর্দৃষ্টি, যেমন মহা কবিদের থাকে। ]

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is Free!!