Film Techniques For Directors
আমারা অনেকে সিনেমা নিয়ে জানতে আগ্রহী থাকি কিন্তু তেমন কোন ধারনা বা বিশ্লেশন জানি না আমি হাবিবুর রহমান তোমাদের ফিল্ম টেকনিক সম্পর্কে লিখেছে ভালো লাগবে সিনেমা বিষয় জানতে ও ফিল্ম বানাতে আমার সাইটে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলোনা
চলচ্চিত্র প্রসঙ্গ ও পদ্ধতি
শিল্পমাধ্যমের মতো চলচ্চিত্রেরও দুটি দিক রয়েছে-প্রসঙ্গ ও পদ্ধতি। চলচ্চিত্রের আঙ্গিক/পদ্ধতি/প্রকরণ টেকনিক ও টেকনোলজি দুয়ের সাথেই জড়িত। আবার চলচ্চিত্রের ইতিহাস চলচ্চিত্রের কলাকৌশলগুলি ধীরে ধীরে আয়ত্ত করার ও কাজে লাগাবার ইতিহাস। ফলে চলচ্চিত্রের টেকনিক তার শিল্পরূপ ও টেকনোলজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্যভাবে সংশ্লিষ্ট। চলচ্চিত্রের মতো একটি জটিল, যন্ত্রচালিত, প্রযুক্তিনির্ভর, তবুও শৈল্পিক, মাধ্যমের পক্ষে এটা স্বাভাবিক। চলচ্চিত্রের মৌল কলাকৌশলগুলো সর্বত্র এক, কিন্তু তাদের ব্যবহার অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রসঙ্গের ওপরও নির্ভর করে।
প্রসঙ্গের ভিত্তিতে চলচ্চিত্রকে কয়েকটা শ্রেণিতে ভাগ করা যায:
১. কাহিনিচিত্র (যার মধ্যে আবার বহু বিভাজন-সামাজিক, ঘরোয়া, নাট্যপ্রধান, কমেডি, অপেরাধর্মী, অ্যাকশন-প্রধান, মিউজিকাল, রহস্য/অ্যাডভেঞ্চার, সায়েন্স ফিকশন, ব্যালে, রাজনৈতিক)
২. তথ্যচিত্র
৩. সংবাদচিত্র
৪. শিক্ষামূলকচিত্র
৫. বিশেষ কলাকৌশল নির্ভর শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি-চিত্র,
৬. অ্যানিমেটেড ছবি।
ফর্ম্যাট বা ফিল্ম ফ্রেমের
চলচ্চিত্রের প্রারম্ভিক টেকনিক্যাল নির্বাচন তাই যথাক্রমে কোন, প্রসঙ্গের ছবি, সাদা কালো না রঙিন চিত্র, আর সেই অনুসারে ফর্ম্যাট বা ফিল্ম ফ্রেমের আকার ঠিক করা। ফর্ম্যাট বলতে ১৬, ৩৫ বা ৭০ মিমি ছবি এবং ফ্রেমের প্রস্থ ও উচ্চতার অনুপাত। সাম্প্রতিক ছবি ৩৫ মিমি ও ১.৮৫ : ১ অনুপাতে অথবা ৭০ মিমি ও ১.৮৫ : ১/২.১৫: ১ অনুপাতে বেশি তৈরি হয়।
আগেকার ১.৩৩ : ১ অনুপাতের তুলনায় আজকের অনুপাতে প্রয়োজন হয় আরো প্রসারিত পর্দার। সিনেমাস্কোপের-বড়ো বাজেটের ছবির ক্ষেত্রে যা প্রচলিত ফিল্ম ফর্ম্যাট- ক্ষেত্রে প্রয়োজন আরো প্রসারিত পর্দার-২.৩৫:১ অনুপাতের। অবশ্য সর্বাধুনিক ফিল্ম ফর্ম্যাট IMAX-য়ে এই অনুপাত এসে দাঁড়িয়েছে ১.৪৩৫ ১-য়ে, অর্থাৎ পুরোনো অনুপাতের অনেকটা কাছাকাছি। কিন্তু এই ফিল্ম ফ্রেমের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৭০ মিমি ও ৪৯ মিমি বলে (প্রতিটি ফ্রেমে আছে ১৫টি করে পারফোরেশন) সাধারণ ৭০ মিমি ফ্রেমের তুলনায় এর ক্ষেত্রফল তিন গুণ বেশি।
Film Techniques For Directors
এই ফিল্মে গৃহীত চিত্র কোনো রকম কণাময়তা ছাড়া সুবিশাল পর্দায় (৮০ ফুট × ১১০ ফুট পর্যন্ত) প্রক্ষেপ করে দেখানো সম্ভব। পর্দার তলের অবস্থান অনুসারে আইম্যাক্স ফিল্ম ইমেজ আমাদের দৃষ্টি ক্ষেত্রের ৬০ থেকে ১২০° পার্শ্ব ও ৪০ থেকে ৮০° উল্লম্ব অঞ্চল অধিকার করতে পারে। ক্যামেরা থেকে র ফিল্ম, প্রজেকটর থেকে পর্দা, এবং হল বা প্রদর্শনগৃহ পর্যন্ত আইম্যাক্স একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, সমন্বিত প্রাযুক্তিক ব্যবস্থা। খুবই ব্যয়সাপেক্ষ হলেও এই ফর্ম্যাটের সম্ভাবনা অসীম। লুকাস ও স্পিলবার্গের মতো পরিচালকরা ভবিষ্যতে এই ফর্ম্যাটে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ফর্ম্যাট নির্বাচনের পর টেকনিক ধাপে ধাপে ও বিভিন্ন পর্যায়ে প্রযুক্ত হতে থাকে। চলচ্চিত্রের নিজস্ব ও স্বতন্ত্র কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আছে; গতি; গতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্রমপরিবর্তন ও ধারাবাহিকতার সমন্বয়, বাস্তবতার বিভ্রম, প্রদর্শিত চিত্র থেকে নির্গত ভৌত প্রভা ও ধ্বনি। যেসব বৈশিষ্টা চলচ্চিত্রের মৌল উপাদানসমূহকে নিয়ন্ত্রিত করে। প্রধান মৌল উপাদান কী কী? কম্পোজিশন (যা রেখা, আকার, আয়তন ও মুভমেন্টের ওপর নির্ভরশীল), ইমেজ (যা একই সঙ্গে সুতীব্র ও অন্তরঙ্গ, নির্বিশেষ ও সুনির্দিষ্ট, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতী), ও মনতাজ। আগেই বলেছি, চলচ্চিত্রে বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের কৌশল ও অজস্র নিজস্ব কলাকৌশলের প্রয়োজন হয়, যাদের তিনটে পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট করা যায়। এখানে আরো বলা দরকার, সিনেমার যে কোনো টেকনিক চলচ্চিত্রের শিল্পরূপের ক্রমবিকাশে প্রধানত তিনটে পর্বের মধ্য দিয়ে গেছে
১. যখন তা ছিল নিতান্ত এক কারিগরি কৌশল,
২. যখন তার ব্যবহারে এসেছে বিশেষ বিশেষ ইফেক্ট বা মুড,
৩. যখন তা চিত্রভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়ে অনেকটা বিমূর্ত চরিত্র পেয়েছে।
যাই হোক, চিত্রপ্রযোজনার প্রথম পর্যায় ক্যামেরা-পূর্ব পর্যায় যা চিত্রনাট্য, অভিনেতা/তাদের পোশাক পরিচ্ছদ/সাজসজ্জা ও লোকেশন/সেট নির্বাচন ও প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ফিল্ম স্টক সংগ্রহ সংক্রান্ত। দ্বিতীয় পর্যায় শুটিং পর্যায় যেখানে ক্যামেরা হল প্রধান। এই সময়ে প্রধানত visual material নিয়ে কাজ করা হয় যা ক্যামেরা দূরত্ব / উচ্চতা ও ক্যামেরাকোণ, ক্যামেরা মুভমেন্ট, লাইটিং প্রভৃতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রূপ পায়। চলচ্চিত্রের ক্ষুদ্রতম উপাদান হল ফ্রেম, বহু ফ্রেমের সংযোগে গড়ে ওঠে একটা শট, শটের যে কোনো ক্ষুদ্র অংশে ফ্রেমের overall arrangement-ই কম্পোজিশন।
এই কম্পোজিশন ক্যামেরার স্থানিক মুভমেন্ট ও লেন্সের ব্যবহারে ক্রমপরিবর্তন পায়। ক্যামেরার মুভমেন্ট-প্যান, টিল্ট, ডলি, ট্র্যাক, ক্রেনশট- নানা ধরনের হয়। লেন্স ক্যামেরাকোণ ও মুভমেন্ট দুটোকেই নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। লাইটিং আলোর তীব্রতা, আলোর পরিমাণ ও কোন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোকে এনে সেটে ফেলা হচ্ছে তার ওপর নির্ভরশীল। লেন্স ও লাইটিং উভয়ের ক্ষেত্রেই আবার ফিল্টারের ভূমিকা রয়েছে। শুটিং পর্যায়ে sound material-এর কিছু অংশ নিয়েও কাজ করা হয়। সংলাপ ও স্বাভাবিক/ইফেক্ট সাউন্ড এর মধ্যে পড়ে। তাদের একটা পৃথক ও স্বতন্ত্র চৌম্বক ট্র্যাকে ধরে রাখা হয়। তৃতীয় ও শেষ পর্যায়টি হল ক্যামেরা উত্তর পর্যায়।
এতে যা শুটিং করা হল তার প্রসেসিং ও প্রিন্টিং, প্রাথমিক সম্পাদনা, ডাবিং ও সংগীত/আবহ সংগীত, চূড়ান্ত সম্পাদনা ও স্পেশাল ইফেক্টের কাজ, গ্রেডিং ও রিলিজ প্রিন্ট তৈরি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এই পর্যায়ে সম্পাদনা প্রধান। সম্পাদনা visual ও sound মেটেরিয়ালগুলির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করে। বিভিন্ন শটের দৈর্ঘ্য ছন্দ ও টেম্পোকে শিল্পসম্মত ও অভিঘাতী করে একত্রে গেঁথে নেওয়াই সম্পাদনার কাজ। ডাবিং হল অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি ও ঠোঁটের নড়াচড়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে অভিনেতার সংলাপ পুনগ্রহণ করা। বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ও প্রায়শই পরস্পরের সম্পূরক ও পরিপূরক এই সব টেকনিকের মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রের শিল্পরূপের প্রকাশ ও তাতেই টেকনিকের টেকনিকোত্তর সার্থকতা।
তাই চলচ্চিত্রের টেকনিককে চলচ্চিত্রের ভাষার সাথে মিলিয়ে ভাবতে হয়। আবার, বিকাশ যে-পথেই হোক না কেন, চলচ্চিত্রের টেকনিকের জন্ম চলচ্চিত্রের টেকনোলজি থেকে। ফলে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চলচ্চিত্রে চিত্রপরিচালককে চলচ্চিত্রের টেকনোলজি সম্পর্কেও এসব জ্ঞান থাকতে হবে।