Art Film And Film Industry
আর্ট কি? এই প্রশ্নটা আজকে আমি বহুবছর ধরে বুঝতে চেষ্টা করছি। আমার বহু বছর মানে বেশি দিন না, এই গত দশবছর, এই যাহ, দেখতে দেখতে দশ বছর হয়ে গেল। (হয়ত অনেকেই ছ্যাঃ ছ্যাঃ করবেন এই শুনে যে মাত্র ১০ বছর আমি এই নিয়ে ভাবিত, আপনাদের ভাবতে ভাবতে ৩০ বছর হয়ে গেল)
এই দশবছরে আর্ট এর সংজ্ঞা বহুবার বদলেছে আমার কাছে, আর্ট যেন একটা মরীচিকা। তাই ধরেও ধরতে পারিনা। ইংরেজিতে “Art” শব্দটি বাংলা করলে দাঁড়ায় “শিল্প”, আবার “শিল্প” শব্দটি ইংরেজিতে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “Industry”। ভারি অদ্ভুত না ?
এবার সত্যি বলতে আমি সব ধরনের আর্ট নিয়ে খুব একটা ভাবিতও না। আমি শুধু ভাবিত “Art Film” নিয়ে।
“Art Film” এর বাংলা কি? “চলচ্চিত্র শিল্প”? তাহলে “চলচ্চিত্র শিল্প” এর ইংরেজি কি? “Film Industry”?
যেখানে সংজ্ঞাই এত গোলমেলে সেখানে এই আর্ট ফিল্ম বাংলা বাজারে কি করে তৈরি হবে সেই নিয়ে আমি সত্যি ভাবছিলাম। এই ভাবনা ভাবার সাথে সাথে আমি ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে পৌঁছে গিয়েছিলাম কান চলচ্চিত্র উৎসবে, গতবছর ।
আমায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল একটি প্যানেলে বক্তব্য রাখার জন্য। আমার প্যানেলের ঠিক আগেই মীরা নায়ার এর একটি প্যানেল ছিল, তো বলাই যায় আমি সপ্তম স্বর্গে। এ আগে এত বড় মঞ্চে আমার বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগ হয়নি, সামনে ভারত এবং ফ্রান্সের অনেক বিদ্যজনেরা বসে আছেন। তা এই নিয়ে আজকের এই গপ্প না গপ্প আর্ট ফিল্ম নিয়ে। কান চলচ্চিত্র উৎসব এক অর্থে আর্টফিল্ম এর মক্কা বলেই পরিচিত সেখানে উপস্থিত হয়ে আমি স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে থাকলাম এই সুযোগ এইবারে আমি আমার সমস্ত না জানা বিষয় গুলোর উত্তর পাব। উত্তর পেলামও, কিন্তু শান্তি পেলাম না। “আর্ট ফিল্ম” ঠিক কি এই নিয়ে মনের মধ্যে ধাঁধাটা রয়েই গেল। কিন্তু জীবনে আর কখনো এই ফেস্টিভ্যাল এ আসার সুযোগ পাব নাকি জানতাম না। তাই ওই ধন্ধটা এক ঢোকে গিলে ফেলে ফিরে আসলাম, তোড়জোড় শুরু করলাম এক মহাযজ্ঞের, এর মধ্যে এক এক করে বিদেশের অন্যান্য জায়গা থেকে ডাক আসতে লাগল, আমিও অবাক শিশু চোখে এই বিশ্ব দেখতে লাগলাম ।
প্রথম প্রথম, প্রথম বিশ্বের সব কিছুই তাক লাগানো লাগে। সব কিছুই মনে হয় এটাই সেরা, আমারও ঠিক সেই রকমই লাগছিল। আর আমি ভাবছিলাম “স্বর্গের শর্টকাট” পেয়ে গেছি। অবশেষে আমার এই ফেস্টিভ্যাল হল, জানুয়ারি মাসে আমি আমি কলকাতা থেকে আবার জার্মানি পৌঁছলাম, ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যে আমার একটা অসম্ভব অসুখকর সময় কাটতে শুরু করল, প্রথম বিশ্বের মেকআপ গুলো আমার চোখের সামনে ঝড়ে ঝড়ে পড়তে থাকল, জীর্ণ কঙ্কালসার চেহারাটা আসতে আসতে প্রকট হল।
পরিস্থিতি আরো অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠল যখন এই মহামারী সামনে আসল এবং আমি ঘর বন্দি জীবন কাটাতে থাকলাম ।
নাঃ বেশিদিন লাগল না, পাক্কা একবছর, একবছর বাদে আমি আজ একটা হিসেব মেলাতে পারলাম, যে ধাঁধাটা মাথার ভিতর চলছিল তা এখন পরিষ্কার হল।
Filmmaker: Habibur Rahman